আজ পশ্চিম যেখানে ভারত পাকিস্তান কিংবা এশিয়া ও আফ্রিকার তথাকথিত তৃতীয় বিশ্বের দেশ গুলোতে শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা আর নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে লম্বা চওড়া শ্লোগান দিয়ে মুখে ফেনা তুলছে সেখানে খোদ আমেরিকা বা বিভিন্ন ইউরোপের দেশগুলোতে নারীদের অধিকার মারাত্মকভাবে হরণ করে নেয়ার পাশাপাশি শিশুদের জীবন দূর্বিসহ এক ঘুর্ণিপাকের মধ্যে পড়ে আছে যার খবর হয়তো আমাদের অনেকের ই অজানা। বাংলাদেশের পাশাপাশি পৃথিবীর বেশ কয়েকটি বিখ্যাত দেশের নামকরা ব্লগ গুলোতে আমার বিচরণ বহুদিনের। আর বর্তমান ভার্চুয়াল বিশ্বে সংবাদ পত্রের বদলে এই ব্লগই হয়ে উঠেছে সমাজের দর্পণ, যেকোন সংস্কৃতির স্পষ্ট প্রতিনিধিত্বকারী।
আমি আমার এই লেখাতে তুলে ধরতে চাইছি একটি স্টেডিয়ামে যখন ডে নাইট খেলা চলে তখন ফ্লাড লাইটের আলোয় পুরো মাঠ আলোকিত হয়ে থাকলেও ঠিক ফ্লাড লাইটের নিচের অংশই যেমন মারাত্ত্বক অন্ধকারচ্ছন্ন থাকে তেমনি মুখে কথার তুবড়ি উঠলেও এশিয়ার বাইরে কিভাবে নারী নির্যাতন আর শিশুদের প্রতি অবহেলা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। আমরা যারা প্রত্নতত্ত্ব বা নৃবিজ্ঞানের ছাত্র তারা দেখেছি কিভাবে পশ্চিমারা তাদের আধিপত্য বিস্তারে বস্তুবাদকে গ্রহণ করেছে আর তার আলোকে একটি বিষয় কিভাবে অবিনির্মাণ সম্ভব তা নিয়ে খোদ পশ্চিমা বিশ্বেই মতভেদ স্পষ্টত লক্ষ্যণীয়। আমরা দেখি পশ্চিমারা আধুনিকতার ধারণার প্রকাশে একদিকে বেকন দেকার্তের দর্শনের আশ্রয় নিয়ে মিথ লিজেণ্ড ও লিখিত উপাত্তকে ইতিহাসের পাতা থেকে খারিজ করে দিচ্ছে। অন্যদিকে তারাই যখন সভ্যতার ধারণাকে নিজেদের প্রয়োজনে টেনে এনেছে তখন সভ্যতার মানদণ্ড হিসেবে লিখন পদ্ধতির আবিষ্কার এবং নানাবিধ বিষয়কে বিবেচনায় আনা কোন বাঁধ সাধেনি। আজ তেমনি তারা অপশ্চিমাদের একটু হেয় করতে নিজেদের বড়ত্ব জাহিরের একটি সহজ মাধ্যম হিসেবে একটি ধারণার দৃশ্যায়ন করছে প্রতিনিয়ত। তা হচ্ছে অপশ্চিমা দেশগুলোতেই কেবল নারী নির্যাতন হয় আর শিশুদের কোন অধিকার নাই। তাই তারা কোটি কোটি টাকা অর্থলগ্নি করে ইউনিসেফ সহ নানান সংগঠণ খুলে এই সকল দেশের অসহায় মানুষের ভাগ্য বিধাতার আসন দখল করার এক সহজ সুযোগ নিতে চাইছে। কিন্তু বাস্তবতায় দেখতে গেলে আমারা সহজেই বুঝি এর আসল উদ্দেশ্য কি ?
প্রায় কোটি টাকা মূল্যের ইউনিসেফের গাড়ী হাকিয়ে বেড়ানো কর্মকর্তাদের কোন বস্তিতে ঢুকার ফুরসত মিলে না তারা তাদের অধিকাংশ সময় ব্যায় করেন পাচতারা হোটেলের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষেই। আর অনেকটা কষ্ট করে যে সকল বক্তব্য সেমিনার সিম্পেজিয়ামে উত্থাপন করেন তার অনেকটাই সবার কাছে অস্পষ্ট। আর আমারা তাদের কাছ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে কেবল একটা সুন্দর কথা শুনতেই অভ্যস্ত। ‘উই আর কনসার্নড’। তারা শুধু আমাদের শিশু আর নারীর অধিকার নিয়ে কনসার্নড ই থাকেন। নারী নির্যাতনের সমাধান আর শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠাতে হিসাবে পশ্চিমা বিশ্ব সমস্ত পৃথিবীব্যাপী তাদের একটি সাধারণীকৃত মডেল প্রদান করার প্রয়াসী। নারী অধিকারে জন্য তার নারীর স্বাধীনতাকে জোরের সাথে প্রচার করলেও, প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতার মিথ্যা শ্লোগানের পেছনে চাপা পড়ে থাকে নিগ্রহের শিকার হাজারো নারীর করুণ আর্তনাদ, হাজারো কুমারী মায়ের যন্ত্রণা ভরা জীবনের ইতিবৃত্ত। হতাশা থেকে জীবনের দিশা হারিয়ে নেশায় চুর হওয়া কিংবা আত্মহননের পথ বেছে নেয়া হাজারো নারীর করুণ কাহিনীর পৃষ্ঠা হয়তো কোনদিনই উল্টানোর সুযোগ তাদের হয়নি হয়তোবা হবেও না। আর কুমারী মায়ের সন্তান হওয়ার সুবাদে একটি নিরীহ শিশু যে পৃথিবীর আলো দেখার পর থেকেই কতটা নিগ্রহের শিকার হতে থাকে তার কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। পশ্চিমের চোখধাধানো জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে নারীরা কিভাবে এক অভিনব দাসত্বের শৃংখলে আবদ্ধ আর তার পাশাপাশি নিরপরাধ হাজার হাজার শিশু কিভাবে বিপথগামী হয়ে উঠে তার একটি কেস স্টাডি গোছের লেখা তুলে ধরার চেষ্টা করবো। বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগীতা, বিকিনী প্রতিযোগীতা,সেলিব্রেটি গেম শো,মডেলিং, ফ্যাশন ম্যাগাজিন কিংবা বিজ্ঞাপনের সাহায্যে আজ নারী আর পণ্যের মধ্যে কোন পার্থক্য খুজে নেয়া দুষ্কর। এর পাশাপাশি পেন্টহাউস ম্যাগাজিন, বাটম্যান,প্লে বয়, ম্যাক্সিম, দ্য ম্যান, ইরোটিকা সহ বিভিন্ন পর্ণোগ্রাফিক ম্যাগাজিন গুলো তাদের মডেল খুজতে কি ধরণের পাশবিক পথ অবলম্বন করছে তা যে ভাষায় বলা যাবে তা হয়তো একটি সভ্য সমাজের ভাষাতে সেন্সর পাওয়ার মতো না। অন্যদিকে পর্ণো মুভি তৈরী করার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দরিদ্র দেশ থেকে নারীদের পাচার করে পশ্চিমে নিয়ে তাদের উপর পাশবিক নির্যাতন চালানো। হয় তাদের নিজের সত্তাকে হরন করে একটি অমাননিক সত্তায় পরিণত করতে তাদের উপর না রকম জুলুম অত্যাচারের পরীক্ষা চালানো হয়। তাদের অনেকে অত্যাচার সহ্য না করতে পেরে মারা যায়, অনেকে জীবনের থেকে সবকিছু হারিয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেয় আর অনেককে নিষ্ঠুর ভাবে হত্যা করা হয়। অন্যদিকে একই দেহে দুই সত্তার উপস্থিতি বা শি-মেল তৈরীতে কিংবা টি এস সিডাকশনের ক্ষেত্রে মারাত্মক ধরণের অস্ত্রোপচার করা হয় যা কেবল বিকৃত রুচির মাণুষের পক্ষেই সম্ভব। এতক্ষণ বলতে চেষ্টা করেছি পর্দার পেছনের কাহিনী। আর যখন আমরা পশ্চিমকে একটি পর্দায় সুন্দর ভাবে উপস্থাপিত ও দৃশ্যায়িত হতে দেখি স্বাধীন সমাজে তাদের ভূমিকা নির্ধারণের ক্ষেত্রে, স্বাধীন পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে কিংবা স্বাধীন পুরুষের সাথে সম্পর্ক তৈরীর ক্ষেত্রে নারী আর পুরুষ সমান অধিকারই ভোগ করে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তাদের শরীরের ওজন, প্রতিটি অঙ্গের মাপ, পোশাক-পরিচ্ছদ থেকে শুরু করে সাজসজ্জা পর্যন্ত সবকিছুই নিয়ন্ত্রিত হয় ফ্যাশন, ডায়েট কিংবা কসমেটিকস ইন্ডাস্ট্রীর দ্বারা। সমাজের নির্দেশ মানতে গিয়ে তারা নিজেকে পরিণত করে সস্তা বিনোদনের পাত্রে। আর, মুক্ত-স্বাধীন হবার জন্য বাধ্যতামূলক ভাবে কাঁধে তুলে নেয় দেহ কে ভিত্তি জীবিকা উপার্জনের মতো নোংরা ও কঠিন দায়িত্ব। আর প্রগতির কথা বলতে গিয়ে একটু আনন্দ করতে গিয়ে তারা দিনের পর দিন আনন্দের ফসল হিসেবে আনছে তাদের আনন্দের ফসল কুমারী মায়ের সন্তানদের।
পশ্চিমের এই সমাজ কাঠামোকে তারা এমনভাবে নিজেদের মতো করে তৈরী সেখানে এটি এমন এক জীবনব্যবস্থা, যার মূলভিত্তি স্বার্থসিদ্ধি হলেও যাদের স্বার্থ প্রতিনিয়ত হরণ করা হয় তাদের মুখে রা টি আনার কোন সুযোগ নেই। এ সমাজব্যবস্থায় মানুষের নেই কারো কাছে কোন জবাবদিহিতা বরং দেখা যায় লাগামহীন ব্যক্তিস্বাধীনতার নামে স্বেচ্ছাচারীতার সুযোগ। তাই, পুঁজিবাদ নিয়ন্ত্রিত সমাজে জবাবদিহিতার অনুপস্থিতি আর চূড়ান্ত ব্যক্তি স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে মানুষ, অন্যের চাওয়া-পাওয়া, আবেগ-অনুভূতি, অসহায়ত্ব এমনকি নারীকেও পরিণত করে ভোগ্যপণ্যে আর তা ক্রমশ হয়ে ওঠে ব্যবসায়ের পুজি। আর যারা ধর্মনির্ভর নারী অধিকার এর কথা বলেন তাদের দৃষ্টিতে পুঁজিবাদী সমাজ নারীকে দেখে নিরেট ভোগ্যপণ্য ও মুনাফা হাসিলের উপকরণ হিসাবে যার জন্য দায়ী নারী নিজেই। আসলে আমাদের সমাজের নারীবাদী চেতনার মূল কথা হয়ে দাড়িয়েছে নাস্তিক্যবাদ। কিন্তু এই যারা উপরোল্লিখিত পর্ণোগ্রাফিক ম্যাগাজিন বা কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা তাদের সবাইযে নাস্তিক আবার সবাই যে ধর্ম বিশ্বাসী এমনটা নয়। আসলে আমদের সমাজের জ্ঞান আর ধারণার অনুশীলন এমন একটা দুরাচারী পর্যায়ে গেছে যে নারীদের এক শ্রেণী ভাবে তাদের পোশাক পায়ের গোড়ালি তেখে যতটা উপরে উঠবে (অনেক সময় মাত্র দুই খন্ড অনেক সময় থাকেও না) তারা ততই প্রগতিশীল আর আধুনিক হবে অন্যদিকে আর এক শ্রেণী মনে করে তাদের নিজেদেরকে যতটা এক্কেবারে চাপা দিয়ে রাখবেন তারা ততটাই প্রকৃতির নিয়মের অধীনে আছেন । তাদের এই ধ্যান ধারণার ফলে একটি শ্রেণী বরাবর ধর্মীয় অনুশীলন করার ফলে বারবার নিগৃহীত হচ্ছে অন্যদিকে অপর শ্রেণী বেশি উপরে উঠে একসময় হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে। আমি বলতে চাইছিলাম একটি সীমারেখার কথা কোন কিছু নিয়ে বাড়াবাড়ি করা ঠিক না। আমাদের দেশের উষ্ম আর্দ্র আবহাওয়াতে আমাদের জীবন বাচানো যেখানে দায় সেখানে যদি পশ্চিমের ঠাণ্ডা পরিবেশের অনুকরণ করতে যদি গ্যালন গ্যালন মদ গেলা হয় আর পশ্চিমের নারীদের অনুকরণে আমাদের নারীরাও যদি ধীরে তাদের পোশাকের আকৃতি ছোট করে উপরের দিকে তুলতে থাকে তবে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবেনা। এর জন্য প্রয়োজন সময় ও কাল উপযোগী ধারণা আর বুদ্ধিভিত্তিক বিকাশ। আমরা আলোকপর্বের ইউরোপের সমাজের ক্রমপরিবর্তনের কথা বিচার করতে গেলে সহজেই এই ধারণাটি বুঝতে পারি। সাইবেরিয়ার ঠাণ্ডায় যেমন পহেলা বৈশাখের মতো লুঙ্গি কাছা দিয়ে লাঠি খেলা যায় না তেমনি আমদের দেশেও ওদের সংস্কৃতিকে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না। কারণ জোর চেষ্টায় বাঘকে ট্রেনিং দেয়া যায় তাকে আমার ট্রেইন্ড বলি কিন্তু কখনই শিক্ষিত বলতে পারবো না।
ফলে, দেশের সমাজ সংস্কৃতির সাথে মিল না রেখে স্বপ্রণোদিত নারী সমাজের কোন সম্মানিত সদস্য হিসাবে বিবেচিত না হয়ে, সমাজে প্রচলিত অন্যান্য পণ্যের মতোই বিবেচিত হয়। মুক্ত সমাজ, মুক্ত মানুষ, মুক্ত অর্থনীতি ইত্যাদি পশ্চিমা পুঁজিবাদী জীবনদর্শনের মূলমন্ত্র হলেও, মুক্ত সমাজের মুক্ত জীবনের ধারণা নারীকে মুক্তি দেয়নি বরং বহুগুনে বেড়েছে তার উপর অত্যাচার আর নির্যাতনের পরিমাণ আর আষ্টেপৃষ্ঠে করেছে শৃঙ্খলিত। বাস্তবতা হলো, স্বাধীনতার ধারণা পশ্চিমা সমাজের মানুষকে ঠেলে দিয়েছে স্বেচ্ছাচারী ও দায়িত্বজ্ঞানহীন এক জীবনের দিকে। যেখানে স্বাধীনতার অপব্যবহারে নির্যাতিত হচ্ছে নারী, পুরুষ , বৃদ্ধ কিংবা শিশু সে যেই হোক না কেন?। জবাবদিহিতার অনুপস্থিতিতে এক মানুষের স্বাধীনতা হচ্ছে অন্য মানুষের দাসত্বের কারণ হয়ে দাড়ায় তা কেউ বোঝে না কিংবা বোঝার চেষ্টাও করে না। আর, ব্যক্তি স্বাধীনতার চূড়ান্ত অপপ্রয়োগে তাদের সমাজে বাড়ছে ধর্ষণ, যৌন কেলেংকারী, কুমারী মাতৃত্ত্ব, শিশু দের অবহেলা ও অযত্ন প্রভৃতি অমানবিক ও পাশবিক ঘটনা। এছাড়া, সীমাহীন স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীগুলোও শুধুমাত্র লাভবান হবার জন্য নারীকে পরিণত করছে নিখাদ ভোগ্যপণ্যে যা এই সব পণ্য হিসেবে ব্যবহৃত নারীরাও বোঝে না বোঝার চেষ্টাও করে না বরং এই ধরণের পণ্যে পরিণত হওয়াকে তার তাদের গৌরব হিসেবেই দেখতে আগ্রহী। বর্তমানের সমাজে তথাকথিত অধিকার প্রতিষ্ঠাকারীরা কিভাবে নারী নির্যাতন ও শিশুর অধিকার হরন করছে তা তুলে ধরার চেষ্টা করি।
শোবিজ জগৎ সিনেমা মডেলিং ও ফ্যাশান
পশ্চিমা সমাজে মূলতঃ তাদের ফ্যাশন,বডি বিল্ডিং জিম, ডায়েট আর কসমেটিক ইন্ডাস্ট্রিগুলোই নির্ধারণ করে নারীর পোশাক, তার সাজ-সজ্জা, এমনকি তার দেহের প্রতিটি অঙ্গের মাপ। স্বাধীনতার মিথ্যা শোগানে । তারপর, অর্ধনগ্ন সেইসব নারীদেহকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা। ১৯৮৮ সালে টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের বিউটি ইন্ডাস্ট্রিগুলো প্রতিবছর ৮.৯ বিলিয়ন পাউন্ড মুনাফা অর্জন করে থাকে। আর, সমস্ত বিশ্বব্যাপী ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিগুলো বছরে অর্জন করে মাত্র ১.৫ হাজার বিলিয়ন ডলারের মুনাফা। মডেলিং করতে গিয়ে গিয়ে বা শোবিজ জগতে প্রতিষ্ঠা পেতে নারীকে আশঙ্কাজনক পর্যায়ে তার ওজন কমাতে হয়,তাকে বাধ্য করা হয় জঘণ্যভাবে দেহ প্রদর্শন করতে, কিংবা পরিচালক বা ইণ্ড্রাষ্ট্রির মালিকের সুদৃষ্টির প্রত্যাশায় তাকে বিছানাতেও সন্তুষ্ট করতে হয়। পরিণতিতে বন্ধ্যাত্ব, ভয়াবহ নিম্ন রক্তচাপ, অ্যানোরেক্সিয়া কিংবা বুলেমিয়ার মতো মারাত্মক রোগ হয় কোন কোন সময় বরণ করতে হয় অকাল মৃত্যুকে। আর অবাধ যৌনাচার এই সকল ক্ষেত্রে অনেকটা বাধ্যতামূলক হয়ে যায় যা এইচ আইভির মতো দুরারোগ্য রোগের বাহক হয়ে জীবনকে বিপন্ন করে অনেকে আত্মহত্যা পর্যন্ত করে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মেনটাল হেলথ এর প্রদত্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ২০ জনে ১ জন নারী অ্যানোরেক্সিয়া, বুলেমিয়া কিংবা মারাত্মক ক্ষুধামন্দার শিকার কিংবা মারাত্ত্বক যৌন রোগের শিকার হয় হয়। আর প্রতিবছর ১০০০ জন মার্কিন নারী অ্যানোরেক্সিয়া রোগে মৃত্যুবরণ করে। (সূত্র: আমেরিকান অ্যানোরেক্সিয়া/বুলেমিয়া অ্যাসোসিয়েশন)। বস্তুতঃ ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিগুলোর বেঁধে দেয়া নিয়ম মতো দৈহিক কাঠামো অর্জন করতে গিয়েই পশ্চিমে অকালে ঝরে যায় এ সব নারীর জীবন। যা প্রথমত তারা বুঝতে পারে না কিন্তু পরে বুঝলেও এই ছকে বাধা জীবন থেকে বের হয়ে আসার সুযোগ পায়না। প্রত্যেকেই একটা নতুন খ্যাতির মোহে আচ্ছন্ন হয়ে চায় ফিগারটাকে জিরো করতে। পরিনামে এই পৃথিবীতে তাদের অবস্থান জিরো হয়ে তারা নিজেরাই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে ওপারে চলে যায়।
যৌন হয়রানির নতুন মাত্রা, নিযাতিত নারী ও শিশু
আমাদের এশিয়াতে যৌন নির্যাতন বলতে পুরুষ কর্তৃক নারী নির্যাতনের কথা বোঝা যায়। আর অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশে আইন করে নারী নির্যাতন বন্ধে সরকার কঠোর উদ্যোগ নিয়েছে। আসলে আমাদের সরকার ও বিরোধী দল প্রত্যেকেই এই একটি ইস্যুতে অন্তত একাত্ম। ইভ টিজিং বিরোধী আইন কতটা কার্যকর হয়েছে বা হয়নি তার সমালোচনা আলোচনাতে না গিয়ে আমরা এটুকু বলতে পারি এটা একটা নজির সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। এটা করা গেছে আমাদের উপমহাদেশের পরিমণ্ডলে কেবল মাত্র পুরুষ কর্তৃক নারী অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয় বলে সকলে খুব সহজেই এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে একটি প্রতিবাদ আর বিচার করে তার দণ্ড পর্যন্ত দিতে পারেন।আর পশ্চিমের নারীরা একটু বেশিই স্বাধীন। তাদের যৌনকর্মে পুরুষদের বাদ দিয়ে তারা হয়ে ওঠে ক্রমাগত সমকামী। আর এইসব সমকামী নারীদের লালসার শিকার হয় অন্য অসহায় নারী। ম্যাকনাইট নিউজের বরাত দিয়ে একটি খবরে প্রকাশ করা হয়েছে ডেনমার্কে লেসবিয়ান বা সমকামী নারীদের হাতে নারী নির্যাতন আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ২০০৪-২০১১ পর্যন্ত এটি শতকরা ২৭ শতাংশ হয়েছে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন ড্রাগস এর ব্যবহারে নারীর পুরুষালি চরিত্র ধারণ করার ফলে এক ধরনের আজগুবি প্রাণীর দেখা মেলে পশ্চিমে। তাদের নির্যাতনের শিকার পুরুষ এবং মহিলা এ দুইই। তাই আমাদের প্রচলিত ধারণা মোতাবেক নারী-পুরুষের লাগামহীন মেলামেশা আর প্রবৃত্তি পূরণের অবাধ সুযোগ প্রদানের ফলাফল স্বরূপ সমাজের নারীরা অহরহ যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে পশ্চিম অনেকাংশে এই ধারণাকে টপকে দিয়েছে। এমনকি এই বিকৃত আচরণ থেকে সে সমাজের নিষ্পাপ শিশুরা পর্যন্ত রেহাই পায় না। নারী স্বাধীনতার অগ্রপথিক যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৪৫ সেকেন্ডে ধর্ষিত হয় একজন নারী, আর বছরে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় সাড়ে সাত লক্ষে। প্রখ্যাত লেখক মাইকেল প্যারেন্টি তার দি আগলি ট্রুথ নামক একটি রিডারে এটি উল্লেখ করেন। আর, বৃটেনে প্রতি ২০ জনের মধ্যে একজন নারী ধর্ষিত হয় যার মধ্যে কেবল মাত্র ১০০ জনের মধ্যে একজন ধর্ষক ধরা পড়ে এটি নরওয়ের ব্লগে পড়েছি। আমার আলোচনার অনুষঙ্গে শিশুরাও যেহেতু আছে তাই তাদের কথাও বলতে হয়। এই সকল বিকৃত মানসিকার কারণে নানা অনৈতিক কাজ করে এই সব নারীরা শিশুদের জীবনকে ঠেলে দেয় অনিশ্চিতের দিকে। আর শিশুর মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়ে তারা হতাশা আর অপ্রাপ্তির বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়ে নিজেকে নানা অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্ত করার ফলে বিগত কয়েক বছরে শিশু ও কিশোর অপরাধীর সংখ্যা আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। উপরের ঘটনাগুলো অনভিপ্রেত বা দূর্ঘটনা বললে আর একটি ঘটনার কথা বলতে হয় তা হচ্ছে কুমারী মায়েদের সন্তান ধারণ। এই ক্ষেত্রে এই সব সন্তান হয় তাদের মায়ের কোন বন্ধুর ভালবাসার ফসল কিন্তু মায়ের সাথে তার বন্ধুর ভালবাসার ইতি টানার পর যখন কোন নতুন সুতোয় টান পড়ে তখন মারাত্বক অবহেলা আর নিগ্রহের শিকার হয় এই সব অসহায় শিশুরা। আর শুধু মায়ের উদাসীনতা আর অনৈতিকতার শাস্তি বয়ে বেড়ায় এই সকল শিশু যারা তাদের অন্ধকার ভবিষ্যতকে কোনমতে দুর করার স্বপ্ন দেখার মূহুর্তে অপর একটি শিশুকে তারই অবস্থানে পাঠিয়ে দেয় ঠিক একই ভাবে যেমনটি তাদের বাবা মা তাদের সাথে করেছিল।
বিপণনে নারীরে দৃশ্যায়নঃ
আমরা একটি উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি এবারে চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত কার মেলার কথা। সেখানে আসলে খুজে নেয়াই দুষ্কর ছিল কোনগুলো পণ্য ,কার না তার সামনে দন্ডায়মান ইরোটিক মুডের নারীগুলো। আসলে আমার নিজের জন্য অপমানজনক কথা হলেও না বলে পারছি না । আমি আমার এক বন্ধুকে এই কার মেলাতে যেতে দেখে জানতে চাইলাম তুই আবার কার কিনবি নাকি? সে অনেকটা দাপটের সাথেই বললো আমি কি আর কার কিনতে যাচ্ছি নাকি!!! আমি অবাক হয়ে জানতে চাইলাম তবে কেন যাচ্ছিস?? তার সোজা সাপ্টা উত্তর বেশির ভাগ লোক যে কাজে যায় তাই ওই কারের সামনে দাঁড়ানো জিনিসগুলা দেখতে যাচ্ছি। আসলে শুনতে খারাপ লাগলেও বাস্তবতা এটাই। আমরা আসলে যারা আমজনতা তার বুঝিনা যে ঐশ্বরিয়ার আর আলকাতরার সম্পর্ক কোথায় আর বাইকের টায়ারের সাথে কারিনারই বা কি সম্পর্ক। তবুও সবখানেই তাদের দেখতে পাই।তবে কেন দেখতে পাই তার উত্তর আমাদের সবার অজানা। কিন্তু অপমানজনক হলেও বাস্তবতা এটাই আমরা তাদের দেখি বা দেখতে চাই বলেই বিজ্ঞাপন গুলো দেখি। হীন স্বার্থ সিদ্ধির মোহে অন্ধ মানুষ নারীর দৈহিক সৌন্দর্যকে পুঁজি করে কিভাবে ব্যবসা চালাচ্ছে তার একটা চরম উদাহরণ এখনকার প্রচলিত নানা স্পোর্টসে এমনকি ক্রিকেট খেলাতেও একটি চার বা ছক্কার মারের সাথে শুরু হওয়া নাম মাত্র পোষাক পরে থাকা চিয়ারলিডার দের বিভিন্ন ভঙ্গিমার দেহ প্রদর্শননির্ভর নৃত্যশৈলী।
আমাদের দেশের দিকে নজর দিলে বিষয়টি অনেকটা খোলামেলা ভাবেই প্রকাশ করেছে আমাদের দেশের বাংলালিংক মোবাইল তাদের একটি বিজ্ঞাপন চিত্রে। এখানে একটা টাকমাথা লোককে দেখা যায় কি সুন্দর ভাবে বোঝাচ্ছে যে আপনার বিয়ে করার কি দরকার। আপনার দরকার এই বাংলালিংক হ্যাণ্ড সেন্ট। এটা কথা বলতে পারবে, গান শোনাবে, আপনার ঘর আলো করে রাখবে ইত্যোকার নানা কথা। বস্তুতঃ নারীর প্রতি এ জঘণ্য দৃষ্টিভঙ্গীর প্রত্যক্ষ ফলাফল হিসাবে একদিকে স্বেচ্ছাচারী মানুষ শুধুমাত্র লাভবান হবার জন্য শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-দরিদ্র সকল নারীকে নির্যাতন করলেও অন্য একটি শ্রেনীর নারীরা নিজেদের বড়ত্ব জাহিরের জন্য যে পথ বেছে নিচ্ছে। শুধু তাই নয় এই কর্পোরেট দুনিয়ায় নারীর হাতেই হাজারো নারী নির্যাতিত যা সবসময় খবরের অন্তরালেই থেকে যায়। আর খবর তৈরীর পেছনের খবরকে কেউ জানার চেষ্টা করেনা বা করার চেষ্টা করেনা। গণমাধ্যম গুলোতে নারীকে বিপণনের প্রতীক হিসাবে উপস্থাপন করার ফলে নারীর প্রতি সমাজের সর্বস্তরে তৈরী হয় অসম্মানজনক এক বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গী। আর বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গীর ফলাফল হিসাবে শিক্ষিত নারীরাও কর্মক্ষেত্রে তাদের পুরুষ সহকর্মীর কাছে প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানির শিকার শিকার হন যা অনেকটা তাদের স্বেচ্ছাপ্রণোদিতও বটে। মিডিয়া ও সরকারী তথ্য অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর ৪০-৬০% নারী কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির শিকার হয়। আর ইউরোপিয়ান উইমেনস লবির প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী যুক্তরাজ্যেও ৪০-৫০% নারী তার পুরুষ সহকর্মীর কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের যৌন হয়রানির শিকার হয়। তবে একটুকু সামাজিক ভাবে সচেতনতা তৈরীর মাধ্যমে এই সব বিকৃত মানসিকতা পরিবর্তনের চেষ্টা করা হলে এ থেকে উত্তরণ সম্ভব।
পারিবারিক অশান্তির ফলে নির্যাতিত শিশু ও নারী
সীমাহীন স্বেচ্ছাচারীতার সুযোগ আর নারীদের অতিরিক্ত স্বাধীনতা লাভের প্রত্যাশা অনেক ক্ষেত্রে জিঘাংসায় রূপ নেয়। যার শিকার সে শুধু নিজে হয় না। কোন কোন সময় মায়ের অন্যায়ের শিকার হয় তার অসহায় কোমলমতি শিশু। এখনকার সমাজে পারিবারিক সহিংসতা কতটা মারাত্মক রূপ নিয়েছে তার বাস্তব চিত্র এই বছর ও বিগত বছরে বাংলাদেশের সংবাদপত্র গুলোর দিকে নজর দিলোই বোঝা যায়। আমরা দেখি-
৪ আগস্ট রাজধানীর আদাবরে মায়ের প্রেমিক রেজাউল করিমের হাতে নির্মমভাবে খুন হয় শিশু জেনিফার ইসলাম তানহা (বাংলানিউজ ২৪)
২৩ মার্চ ২০১১ … চট্টগ্রামে সৎ মায়ের হাতে স্কুল ছাত্র খুন :: খুনী আটক (ইউকে বিডিনিউজ)
একই দিনে টাঙ্গাইলে চার বছরের শিশু ধর্ষন :: ধর্ষক পলাতক
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১১ … কুষ্টিয়ায় মায়ের হাতে শিশুপুত্র খুন (আমার দেশ)
৬ মে ২০১০ … জাজিরায় মায়ের হাতে নড়িয়ায় বাবার হাতে মেয়ে খুন (খেলার খবর, কম)
২৩ মার্চ দুপুরে হালিশহর ১ নং রোডে সৎ মায়ের হাতে খুন হয় স্কুল ছাত্র মাশফিক। তার মাত্র চারদিনের মাথায় পাহাড়তলী সরাইপাড়া এলাকা থেকে পাঁচ মাসের শিশু পুত্র (দৈনিক আজাদী)
২০১১ ,জুন মাসে বিমানবন্দর থানা এলাকায় মায়ের হাতে প্রাণ হারায় তিন শিশু (বাংলানিউজ ২৪)।
জীবন সম্পর্কে এক ধরণের ভয়ঙ্কর ভ্রান্তিমূলক ধারণা থেকে বিয়ের পূর্বে বা পরে নারীরা হয় পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে অন্যদিকে বিবাহিত জীবনে নারীদের অতিরিক্ত লিপ্সা তার সন্তানের জীবনকে করে তোলে দুর্বিসহ। বর্তমানে শুধু পরকীয়ার জের ধরে পিতামাতার বন্ধন ছিন্ন হওয়াতে শিশুরা বেশিরভাগ নির্যাতনের শিকার হয়। যেখানে পুরুষ ও নারী প্রত্যেকেই সমান দোষী। অন্য একটি পরিসংখ্যানিকন উপাত্তের দিকে নজর দিলে আমরা দেখি যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১৮ সেকেন্ডে একজন নারী নির্যাতিত হয় যাদের বেশির ভাগই বিবাহ পূর্ববর্তী। ইউএস জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট এর ১৯৯৮ সালে প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর ৯ লক্ষ ৬০ হাজার পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। আর, প্রায় ৪০ লক্ষ নারী তার স্বামী অথবা বয়ফ্রেন্ডের দ্বারা শারীরিকভাবে হয় নির্যাতিত হয়। এর পেছনে মূল ঘটনা হিসেবে পরকীয়ার কথা বলা হয়েছে।
কুমারী মা ও তাদের শিশু:
আধুনিকতা নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশাকে বৈধতা প্রদান করায় তা একটি মারাত্বক রূপ ধারণ করেছে। বিভিন্নদেশে এখন যৌনক্রিয়া আর সকাল বিকালের নাস্তার মাঝে কোন তফাৎ খুঁজে বের করা বেশ কষ্টসাধ্য। কিন্তু এর ভয়াবহ ফলাফল প্রত্যক্ষ্য করা যায় তখন যখন এই সব নারীরা মা হন। তাদের বেশির ভাগ অল্প বয়সে সন্তান ধারণ করে ফেলার পর তা বুঝতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রে সন্তানের দায়িত্ব গ্রহণে অপারগ মায়ের কাছে ভ্রুণ হত্যা ব্যতিত দ্বিতীয় কোন পথ খোলা থাকেনা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিনোদন ও উপভোগান্তে পুরুষ সঙ্গী আর্থিক বা সামাজিক কোন দায়দায়িত্ব স্বীকার না করায় ঐ নারীকে একাকীই নিতে হয় তাকে অনাহুত সন্তানের দায়িত্ব। আর, অপরিণত বয়সে পর্বতসম দায়িত্ব নিয়ে গিয়ে তাকে হতে হয় ভয়ঙ্কর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার। যুক্তরাষ্ট্রের গুটম্যাচার ইনস্টিটিউট এর প্রদত্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর ১৫-১৭ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে প্রায় ৭ লক্ষ ৫০ হাজার অবিবাহিত নারী গর্ভবতী হয়। আর, সেদেশের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে বছরে ১ লক্ষ ১৩ হাজার কিশোরী মেয়ে গর্ভধারণ করে। যাদের মধ্যে সিংহভাগ গর্ভপাত ঘটিয়ে ভ্রুণ হত্যা করে দায়ভার থেকে মুক্ত হলেও বাকি জীবন অনেক দুর্বিসহ যন্ত্রণার মধ্যে কাটাতে হয়। আর যারা ব্যর্থ হয় তাদের ঘাড়ে অনেকটা ঘোড়ার জীনের মতোই চেপে বসে এক ধরণের অপরাধবোধ সাথে তার এই গুরুদায়িত্ব থেকেও মুক্তিলাভের পথ পায়না।
বৈষম্যমূলক অবস্থানঃ
যার পৃথিবীব্যাপী নারী-পুরুষের সমঅধিকারের বার্তা প্রচার করছে খোদ সেই দেশ গুলোর সমাজেই নারীরা আজও প্রচন্ড বৈষ্যমের শিকার। শুধু মাত্র নারী হবার জন্য একই কাজের জন্য তাকে পুরুষের চাইতে দেয়া হয় অনেক কম অর্থ। কিন্তু তাদের এই বৈষম্যমূলক অনাচার দৃষ্টির আড়ালেই থেকে যায়। আর বেশি বেশি ফলাও করে প্রচার করা হয় তৃতীয় বিশ্বের কাহিনীকে। আসলে এক ধরণের দৃশ্যায়ন এই ধরণের গুরুতর অপরাধীকেও তার অপরাধ থেকে রেহাই দিয়ে আসছে। আর খবরের অন্তরালের এই সব খবর কোনদিন প্রকাশিত হয় না বলেই এই সব অনাচারের কুশীলবরা দিনের পর দিন পর্দার আড়ালেই থেকে যায়। এখন থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে প্রেসিডেন্ট জন.এফ.কেনেডি যুক্তরাষ্ট্রে ইকুয়েল পে অ্যাক্ট আইন পাশ করলেও, এখনও ১৫ বছর ও তার উর্ধ্বে বয়সের কর্মজীবি নারীরা একই কাজের জন্য পুরুষদের চাইতে প্রতি ডলারে ২৩ সেন্ট কম উপার্জন করে। ইউ.এস গর্ভমেন্ট অ্যাকাউন্টেবিলিটি অফিস এর জরিপ থেকে দেখা যায়, সে দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা বিভাগের মোট কর্মচারীর প্রায় ৭০ ভাগ নারী হলেও নারী ব্যবস্থাপকরা পুরুষের চাইতে অনেক কম অর্থ পেয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, ১৯৯৫-২০০০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে নারী-পুরুষের উপার্জনের এই বৈষম্য ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। বস্তুতঃ পশ্চিমের দেশগুলোতে নারীরা শুধুমাত্র দুটি পেশায় পুরুষদের চাইতে বেশী উপার্জন করে, তার একটি হচ্ছে মডেলিং আর অন্যটি হচ্ছে পতিতাবৃত্তি।
পর্ণোগ্রাফি ও পতিতাবৃত্তিঃ
পশ্চিমা বিশ্বে নারীরা সবচাইতে জঘন্য ভাবে নির্যাতিত হয় পর্ণোগ্রাফিক ইন্ডাস্ট্রির মালিক কর্মকর্তা আর মডেলডের দ্বারা। তারা নারীদের অনেকটা জবাইয়ের পশুর মতোই ব্যবহার করে তাদের দিয়ে এই জঘন্য বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে যুগের পর যুগ। কিন্তু তারা বরাবরই পর্দার আড়ালে থেকে গেছে। প্রতিবছর উৎসব আনন্দে প্রানোচছল করে নারী দিবস পালন করা হয় যেখানে বক্তৃতার মঞ্চে কথার ঝড় ওঠে কিন্তু এই অপকর্মের প্রতিবাদ অতি আশ্চর্যজনকভাবে অনুপস্থিত থাকে। একুশ শতকের সভ্য পৃথিবীতে যেখানে দাস প্রথা পুরোপুরি নিষিদ্ধ সেখানে একটি সংঘবদ্ধ চক্র নারী পাচার এবং তাদের দাস বানানোর মাধ্যমে তাদের পর্ণোগ্রফিক ইণ্ডাষ্ট্রি বেশ ভালভাবেই চালিয়ে যাচ্ছে।এছাড়া প্রায় প্রতিবছর এই ইণ্ডাষ্ট্রিগুলো তাদের অডিশনে হাজার হাজার নারীকে আহবান করে। তাদের অডিশনের নামে চালানো সীমাহীন যৌন নির্যাতন। অনেকে এই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মৃত্যুমুখে পতিত হওয়ার ঘটনাও ঘটে। আর যারা টিকে থাকে শুধু অর্থের বিনিময়ে ক্যামেরার সামনে নিজের সবটুকু উজাড় করে দেয়। এই সকল নারীরা নিজেদের জীবনকে একদিনে যেমন বিপন্ন মানববেতর করে তুলেছে অণ্যদিকে তাদের অপকর্মের মাধ্যমে তৈরী ভিডিও বিপরীতে হাজার হাজার নারীর জীবনে বয়ে আনে এক দুর্বিসহ যাতনা। নগ্ন নারীদেহের উপস্থাপনা আর যৌনকর্মকে গড়ে তোলা এই চক্র সমগ্র পৃথিবী ব্যাপী বিস্তৃত হয়েছে যারা তাদের অর্থ আর দৌরাত্বদিয়ে এতটাই প্রভাব প্রতিপত্ত্বিশীল হয়ে উঠেছে তাদের কাছে বড় বড় মানবাধিকার সংস্থাও মুখ খুলতে সাহস করেনা। এই জঘন্য লিপ্সার শিকার হচ্ছে লক্ষ কোটি অসহায় নারী। পরিসংখ্যানে পাওয়া যায় এই পৃথিবীতে প্রায় ৫৭ বিলিয়ন ইউ.এস ডলার এর বেশি অর্থমূল্যের পর্ণগ্রাফিক ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে। অবাক করার বিষয় হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত কয়েকটি পর্ণোগ্রাফিক ইন্ডাস্ট্রির বার্ষিক রাজস্ব সে দেশের বহুল প্রচারিত ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এ.বি.সি, সি.বি.এস এবং এন.বি.সি-র প্রদত্ত মোট রাজস্বের চাইতেও বেশী (৬.২ বিলিয়ন ডলার) হলেও প্রশাসন কোন এক অদৃশ্য ইঙ্গিতে আজও নীরব। অন্যদিকে ইন্টারনেটে হিট কাউন্টার থেকে হিসেব করলে দেখা যায় সবচেষে বেশি হিট পড়ে এই পর্ণোগ্রাফিক সাইট গুলোতেই ।আর সবচেয়ে ধনী দুইটি ওয়েবসাইট ও এই পর্ণোগ্রাফি নির্ভর।
বাস্তবতা বিচার করতে গেলে আমার স্পষ্টত দেখি পুঁজিবাদী মন্ত্রে দীক্ষিত এই বর্বর পশ্চিমাদের সীমাহীন অর্থলোভ আর যৌন লিপ্সার বলি হয়ে কত হাজার নারী নির্যাতিত হচ্ছে তা কারও অজানা নয়। কিন্তু ওই পশ্চিমারা যখন নারীবাদের কথা বলে তখন আমাদের মতো দেশের মানুষ আমরা সুন্দর করে সেমিনার আয়োজন করে তাদের বক্তৃতা শুনে একদিকে নিজেদের ধন্য করি। অন্যদিকে কোটা ব্যবস্থার মাধ্যমে একেবারে শুরু থেকেই নারীদের অক্ষম করে দিয়ে তাদের অধিকার নিশ্চিত করে দেয়ার পথ খুঁজে নেই। আর মনে করি বাসের মাথায় ইঞ্জিনের কাছে পরপর তিনটা বসবার সিটে প্রতিবন্ধিদের কাতারে তাদের বসার স্থান করে দিলেই কিংবা ইভ টিজিং বিরোধী আইন করলেই সব সমস্যার সমাধান হবে । চাই কি আমাদের পশ্চিমা প্রভুরাও সন্তুষ্ট হয়ে আমাদের দিকে হাত বাড়িয়ে কলাটা মুলোটা এগিয়ে দিবেন যা কিনা আমাদের উন্নত করে তুলবে। প্রকৃত অর্থ যদি নারীবাদের তিনটা স্কুলের প্রথম দুটির স্কুলের আলোকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হয় তবে স্পষ্টত দেখা যায়। ‘নারীবাদ’ বা ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ এর অর্থ করা যায় সমাজের সকল কাজে পুরুষের পাশাপাশি সুযোগ নিয়ে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে নারীর আর্থিক প্রতিষ্ঠাসহ ক্ষমতা ও অধিকার অর্জন। বর্তমানে এই প্রেক্ষপট পাল্টে তৃতীয় বিশ্বের এবং বিশেষত আফ্রো-এশিয়ার দেশগুলোকে সামাজিক ও কুটনৈতিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করে একটি নীতিমালা দাঁড় করিয়ে কোটা ব্যাবস্থার মাধ্যমে এই সকল দেশের উন্নয়নকে সুকৌশলে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে।তৃতীয় বিশ্বের এই সকল দরিদ্র দেশগুলোতে যেখানে কোটি কোটি পুরুষদের কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই সেখানে নারীর ক্ষমতায়নের নামে পুরুষদের কর্মহীন রেখে নারীদের নামমাত্র মজুরীতে নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বিভিন্ন এন.জি.ও এবং বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো লক্ষকোটি টাকা হাতিয়ে নিচেছ পাশাপাশি তারা অধিকার প্রতিষ্ঠার নামে এই সকল দেশে নারী আর পুরুষকে পরস্পরের বিপরীতমুখী করে দাঁড় করাচ্ছে। তাই এই সকল বিষয় উপলব্ধির মাধ্যমে পশ্চিমাদের বেধে দেয়া নারী নীতি নয় বরং নিজেদের সমাজ সংস্কৃতির সাথে মিল রেখে নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমেই সম্ভব নারীর অধিকার নিশ্চিত করা একটি শিশুকে সুন্দর ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে নেয়। পরস্পর বিপরীতমুখী অবস্থান নয় আর প্রথমেই অক্ষম ভেবে কোটা প্রণয়ন নয় বরং নারী পুরুষ উভয়ের পারস্পরিক সহাবস্থান ও সহযোগীতামূলক অংশগ্রহণের মাধ্যমেই এই সকল তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর উন্নাতি লাভ সম্ভব। একদিনে উন্নতির চরম শিখরে না পৌছতে পারলেও অন্তত দারিদ্রের দুষ্ট চক্রের মতো নানা চক্রকে ছেদ করে তারা একটি সোনালী ভবিষ্যতে স্বপ্ন যাত্রার দিশা পেতে পারে যা তাদের সহায়তা করবে বিশ্বায়নের কঠিন চ্যালেঞ্চকে রুখে দিয়ে সামনের দিকে, উন্নতির দিকে, প্রগতির দিকে দীপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে যেতে।
মোঃ আদনান আরিফ সালিম অর্ণব
Archaeology Of Humankind