Category Archives: বিশ্ব ইতিহাস

বসনিয়ানদের আজন্ম সংগ্রামের কথা

Balkan War - Blood and Honeyআর অল্প কিছু সময়ের অপেক্ষা। বিশ্বের এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত সবাই শুরু করবে ফুটবল উৎসব। এখানে ফুটবল নিয়ে কথা বলাটাই মূল প্রতিপাদ্য হলেও আমি সে সাহস দেখাচ্ছি না, বলতে চাইছি অন্যকথা। প্রত্নতত্ত্ব-ইতিহাসের শিক্ষার্থী হিসেবে খেলার থেকে আমার কাছে গুরুত্ব পেয়েছে বসনিয়ার নিপীড়িত মানুষের ইতিবৃত্ত। একটি দেশ মানে অনেকগুলো স্বপ্ন, অনেক সাধনা আর সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা। বসনিয়া হয়ত এমন একটি দেশ যেখানে এই সবগুলো সত্যি মিথ্যে হয়ে গেছে। একটি গাড়ির পেট্রোল ট্যাংকার যেমন জন্ম থেকে জ্বলার অনুপ্রেরণা নিয়ে এগিয়ে নেয় গাড়িকে। তেমনি বাবা-মায়ের লাশ, ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া বসতবাটি আর দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া বিরাণ ফসলের ক্ষেত দেখেই সব এইসব বসনিয়ানের। তাদের দেশে একটি শিশুর মুখে এক ফোঁটা দুধ ওঠার আগেই হয়তো স্পর্শ করে বর্বর স্লাভদের বর্বরতা। বিশ্বের প্রতি দেশে শিশুরা যেখানে জন্মের পর মধু মুখে দেয় এরা সেখানে পায় অশ্র“জলের নোনা স্বাদ।  তাই বসনিয়া মানে গণহত্যা আর ধর্ষণে বিদ্ধস্ত একটি জাতি, বসনিয়া মানে এক ধ্বংস্তুপের নাম। Continue reading বসনিয়ানদের আজন্ম সংগ্রামের কথা

পৈশাচিক নেক্রোফিলিয়া বা শবাসক্তি (পর্ব-১)

প্SPN_Necrophiliaরত্নতত্ত্বে অধ্যয়ন করতে গিয়ে আমরা অতীত রাজা রাজড়াদের নানা ধরণের অবাক করার মতো খেয়াল খুশির পরিচয় পাই। এর মধ্যে অদ্ভুদ কিছু বিষয় যেমন মানুষের চিত্তকে বিচলিত করে তেমনি কিছু বিষয় আছে যেগুলো শুনলে ঘৃণায় মুখ বিকৃত করতে হয়। আমার একটা অভ্যাস আছে অবসর সময়টুকু বেশিরভাগই কাটাই হয় বই পড়ে কিংবা নেটে ব্রাউজিং করে যেখানে প্রত্নতত্ত্ব আর ইতিহাসই কেন্দ্রে থাকে। আর প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই এটা আমাকে এতটাই টানে যে আমার লেখাপড়ার গণ্ডিটা অনেকটা প্রত্নতত্বের মধ্যেই কিভাবে যেন আটকে গেছে। জা. বি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে তখন তৃতীয় বর্ষের মাঝামাঝি পড়ি এমনটা হবে। একটি সংবাদপত্রে ফিচার লেখার প্রস্তাব পেয়ে মিশরীয় মমির কিছু ছবি দেখছিলাম। ফিচার লেখার তুলনায় আমার অনুসন্ধিৎসু চোখ নিবদ্ধ হয় একটি বিশেষ বিষয়ের প্রতি। তখন ঐ প্রবন্ধ শেষ করার কাজ অনেক পিছিয়ে যায়। আমি ভাবতে থাকি অন্য বিষয় নিয়ে। Continue reading পৈশাচিক নেক্রোফিলিয়া বা শবাসক্তি (পর্ব-১)

মিশেল ফুঁকো ও উত্তর আধুনিক চিন্তাকাঠামো

urlবিশিষ্ট দার্শনিক ও উত্তর আধুনিক চিন্তাধারার অন্যতম পুরোধা মিশেল ফুঁকো ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দের ১৫ অক্টোবর ফ্রান্সের Poitiers নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। ফ্রান্সের বিশিষ্ট সার্জন পল ফুকো ছিলেন তাঁর বাবা। বাবা তাঁর নাম রেখেছিলেন পল-মিশেল ফুকো, সেই সাথে ইচ্ছা ছিল জ্ঞানচর্চা শেশে ফুঁকো বাবার মতো চিকিৎসক হবেন। শিক্ষাজীবনের প্রাথমিক সময় বেশ ভালোভাবে কাটতে থাকে তার। তবে তাঁর প্রতিভার বিকাশ লক্ষ করা যায় বিখ্যাত জেসুইট কলেজ সেন্ট-স্টানিসলাসে ভর্তির পর। পড়াশোনায় বিশেষ সাফল্য তাঁকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ফ্রান্সের মানবিক শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মক্ষেত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান École Normale Supérieure
– এ প্রবেশের সুযোগ করে দেয়। তবে এখানকার জীবন ফুকোর জন্য ছিল বেশ কষ্টকর। নানা কারণে তিনি প্রচণ্ড অবসাদগ্রস্ততা ও হতাশায় ভুগতে থাকেন। একসময় মানসিক বৈকল্য তাকে মনোচিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হতে বাধ্য করে। তিনি এরপর হটাৎ মনোবিজ্ঞানে বিশেষ আগ্রহী হন। Continue reading মিশেল ফুঁকো ও উত্তর আধুনিক চিন্তাকাঠামো

দজলা-ফোরাতের দেশ পর্ব এক (সুমেরীয় সভ্যতা)

নীলনদের তীরে গড়ে ওঠা পিরামিড আর মমির দেশ মিশরের পশ্চিমে লোহিত সাগর। লোহিত সাগরের উত্তর দিকে ভূমধ্যসাগরের পশ্চিম ঘেঁষে একটি চমৎকার ভূখণ্ড এগিয়ে গিয়েছে আরও উত্তরে। এশিয়া মাইনরকে উত্তরে রেখে দ্বিতীয়া পাওয়া চাঁদের মতো বাঁক নিয়েছে। দক্ষিণে নেমে এসেছে পারস্য উপসাগরের সীমানায়। চাঁদ-আকৃতি আর উর্বর মাটির জন্য অনেকের কাছে ভূখণ্ডটির নাম ফার্টাইল ক্রিসেন্ট বা অর্ধচন্দ্রাকৃতির উর্বর ভূমি। এই অঞ্চলেই গড়ে উঠেছে প্রাচীন পৃথিবীর বিখ্যাত মেসোপটেমীয় সভ্যতা। গ্রিক শব্দ ‘মেসোপটেমিয়ার’ অর্থ হচ্ছে ‘দুই নদীর মধ্যবর্তী ভূমি।’ মেসোপটেমিয়ার পূর্ব দিকে বয়ে গিয়েছে টাইগ্রিস নদী, যাকে দজলা নদীও বল হয়। আর পশ্চিমে বয়ে গিয়েছে ইউফ্রেটিস নদী। একে অনেকে বলে ফোরাত নদী।  Continue reading দজলা-ফোরাতের দেশ পর্ব এক (সুমেরীয় সভ্যতা)

নীলনদ মমি আর পিরামিডের দেশ

ইতিহাসের জনক হেরোডোটাস ছিলেন গ্রিস দেশের অধিবাসী। প্রাচীন সভ্যতা দেখার আকর্ষণে একবার মিশরে আসেন। অবাক বিস্ময়ে মিশরীয় সভ্যতার নানা অবদান দেখে বুঝতে পেরেছিলেন এই সভ্যতা গড়ে তোলার পেছনে নীলনদের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এ কারণেই তিনি মন্তব্য করেছেন ‘মিশর নীলনদের দান’। প্রকৃতপক্ষে নগর সভ্যতা গড়ে তুলতে মিশরকে প্রথম পথ দেখিয়েছে নীলনদ। নবোপলীয় যুগে মিশরের কৃষকরা কৃষিকাজ করতে গিয়ে নীলনদকে গভীরভাবে লক্ষ করেছে। তারা কখনো নীলনদকে দেখেছে জীবনের প্রতীক হিসেবে, কখনো বা ভয়ঙ্কর দৈত্য রূপে। নীলনদের জল সেচ করেই কৃষক ফসল ফলাতো। তখন নীলনদকে কৃষক দেখতো আশীর্বাদ হিসাবে। কিন্তু যখন বন্যার জল দু’কূল উপচে পড়তো তখন ভয়ার্ত কৃষক ভাবতোÑবুঝি নীলনদ কোন রাক্ষুসে দৈত্য। তীব্র স্রোতে কেমন গ্রাস করে নেয় লকলকে বেড়ে ওঠা ফসল।   Continue reading নীলনদ মমি আর পিরামিডের দেশ

ইতিহাসের এ কি ধারা ?????

কিছুদিন আগে থেকে  ইউরোপের ইতিহাস নিয়ে কাজ করতে শুরু করেছি। কিন্তু  পড়ালেখা যতো বেশি করছি ঘেন্নায় মুখ যে তেতো হয়ে আসে।

শ্লার হারামি ইউরোপীয়রা ইতিহাসে খালি ক্যাথলিক মৌলবাদ, মানুষ খুন রাহাজানি বাদে আর কিছুই করে নাই। সমাজ-সংস্কৃতি নিয়ে কি তাদের কিছুই করার সুযোগ আসে নি।
অবাক হই এই ইউরোপের ইতিহাস নিয়ে আমাদের দেশের কিছু আবুল টাইপের শুশীল নাচন-কুদন করে নিজেদের আধুনিক ভাবে। ইউরোপে যে কাহিনী ঘটেছে উনিশ শতকের গোড়াতে বাংলার সুলতানী আমলেই সেই সেকুলারিজম বিকাশ লাভ করে।

আসলে ইউরোপের প্রজেক্ট বাগাতে গেলে তো আর এই সত্য বলা চলে না। ওখানে তো আর বলা চলে না যে আমাদের দেশে ২৫০০ বছরের পুরাতন নগরের চিহ্ন আছে। আমাদের দেশের প্রাগিতিহাস আছে। মুদ্রাভিত্তিক অর্থনীতি বিকাশের প্রমাণ আছে। আছে টাকশাল নগরী গড়ে ওঠার প্রমাণ।  Continue reading ইতিহাসের এ কি ধারা ?????

সেকুলার ধারণার প্রসার ও বাংলার মধ্যযুগ

বাংলাদেশের ইতিহাস প্রকৃত অর্থে বাস্তবতা বিকৃতির ইতিহাস । এটি বললে অনেকেই আতকে উঠতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা বুঝতে পারলে তিনি সহজেই বিষয়টি মেনে নিতে পারবেন। আমাদের দেশের ইতিহাস গবেষকদের মূল সীমাবদ্ধতার ক্ষেত্র বা সমস্যা চিহ্নিত করার দুঃসাহস আমি দেখাবো না শুধু এটুকু বলতে পারি। আমাদের দেশের ইতিহাস চর্চা অনেকটাই থেমে থাকে মধ্যযুগের প্রারম্ভ অর্থাৎ সুলতানী যুগ পর্যন্ত গিয়ে। এই ক্ষেত্রে বাংলার সুলতানী যুগের ইতিহাস অনেকটাই অধরা থেকে যায়। আমরা সুলতানী যুগের ইতিহাস বিশেষত হোসেনশাহী যুগের ইতিহাস অনুসন্ধান প্রসংগে বিষয়টি সহজেই বিশ্লেষণ করতে পারি। ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় আমরা দেখি তুর্কি বিজেতারা বারো শতকের শুরুতে ভারতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। সেই বিষয়ের সাথে হিসেব মেলাতে গেলে আরো বহুদিন পর প্রায় তের শতকের শুরুতে তাদের রাজনৈতিক সাফল্যের সূচনা ঘটে বাংলায়। বস্তুত বাংলার মধ্যযুগের যাত্রা শুরু হয় এখান থেকেই যেটি আমাদের গবেষণা আর চর্চার অপারগতা হেতু অনেকটাই অন্ধকারে থেকে গেছে।
আমরা দেখি মধ্যযুগের কালপরিসরকে বড় দাগে দুটো পর্বে ভাগ করা যায়। Continue reading সেকুলার ধারণার প্রসার ও বাংলার মধ্যযুগ