বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প

28socials3bigমানব সংস্কৃতির ঐতিহাসিক আবর্তন যেসব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের ওপর নির্ভর করে বিশ্লেষণ করতে হয় তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ মৃৎপাত্র। একজন প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষক হিসেবে এই মৃৎপাত্রের ভাঙ্গাচোরা টুকরাগুলোকে অনেক বিরক্তির, যন্ত্রণাদায়ক ও কষ্টকর গবেষণা উপকরণ হিসেবেই মনে হয়েছে। কোনো প্রত্নস্থান থেকে নানা উপায়ে যে প্রত্ন উপকরণ সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে তা হচ্ছে পর্ট সার্ড তথা এই খোলামকুচিই। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী হিসেবে যখন বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থান উয়ারী-বটেশ্বরের খনন কাজে অংশ নিয়েছিলাম তখন থেকেই পরিচয় নানা ধরনের মৃৎপাত্রের টুকরা আর গাঠনিক বৈশিষ্ট্যের সাথে।
উয়ারী-বটেশ্বর থেকে প্রাপ্ত মৃৎপাত্রগুলোর মধ্যে সবার আগে বলা যেতে পারে কালো-ও-লাল মৃৎপাত্র, উত্তরাঞ্চলীয় কালো চকচকে মৃৎপাত্র কিংবা কালো প্রলেপযুক্ত মৃৎপাত্রের কথা। প্রাথমিকভাবে ধরে নেয়া যায় এই বিশেষ মৃৎপাত্রের মধ্যে কালো-ও-লাল মৃৎপাত্র প্রাপ্তি বাংলার ইতিহাসকে নতুন করে লিখতে বাধ্য করেছে। বিশ্বের কোনো স্থানে একই সাথে Continue reading বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প

দোলাই নদীর গল্প

7853dc2ec15540169bde5d522c9ffb53রাজধানী ঢাকায় দোলাই নামে একটি নদী ছিল। যদিও নাগরিক ভাষ্যে এটি একদা খাল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল এবং হাল-আমলে দোলাই নদী ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে রাজপথ। পুরান ঢাকায় এখনও ধোলাইখাল নামে একটি এলাকা আছে, যে এলাকাটি মোটরপার্টসের দোকানের জন্য বিখ্যাত। আছে লোহারপুল ও কাঠেরপুল। পুল দুটি ছিল দোলাইয়ের ওপর। ধোলাইখাল, লোহারপুল, কাঠেরপুল, দোলাইরপাড় ইত্যাদি নাম মনে করিয়ে দেয় মৃত এক নদীর স্মৃতি। অথচ মোগল আমলের শুরুতেও দোলাই ঢাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নদীপথ ছিল বলে জানিয়েছেন সুলতানি ও মোগল আমল নিয়ে গবেষণার জন্য বিখ্যাত ঐতিহাসিক Continue reading দোলাই নদীর গল্প

শর্টকার্ট ভাইরাসের যন্ত্রণা এড়াতে

shortcut-virus-vtশর্টকাট ভাইরাস স্থায়ীভাবে রিমুভের জন্য আপনাকে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হবে। এগুলো সঠিক এবং ধারাবাহিকভাবে করা গেলে সহজেই মুক্তি মিলতে পারে শটকার্ট ভাইরাসের জ্বালাতন থেকে। নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করে চেষ্টা নিন একটু…… দেখা যাক কাজ হয় কিনা ?

প্রথমে যদি কম্পুটারে শর্টকার্ট ভাইরাস না থাকে সেক্ষেত্রে নিরাপত্তা ঝালিয়ে নিন এভাবে… Continue reading শর্টকার্ট ভাইরাসের যন্ত্রণা এড়াতে

সেন্ট নিকোলাস টলেন্টিনোর গির্জা

aaঢাকার অদূরে অবস্থিত গাজীপুরের গুরুত্ব স্যাটেলাইট টাউন হিসেবে সর্বাধিক। বিশেষ করে সময়ের আবর্তে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এখানে অবস্থিত। পাশাপাশি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ এবং আইআইটির অবস্থান একে দিয়েছে শিক্ষানগরীর সম্মান। তবে হাজার বছরের প্রাচীন নগরী ঢাকার উপকণ্ঠে অবস্থিত এ নগরীর প্রত্ন-ঐতিহ্যকে ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। অন্তত জয়দেবপুরের ভাওয়াল রাজবাড়ী ও ভাওয়াল রাজ শ্মশানেশ্বরী, শ্রীপুরের ইন্দ্রাকপুর, কাপাসিয়ার টোক বাদশাহী মসজিদ, পূবাইল জমিদার বাড়ি, কালিয়াকৈরের বলিয়াদি জমিদার বাড়ি, একডালা দুর্গ, টঙ্গীর মীর জুমলা সেতুর পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রথম খ্রিস্ট ধর্মীয় উপাসনা স্থান সেন্ট নিকোলাস টলেন্টিনো চার্চের উপস্থিতি একে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। অন্যদিকে বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের স্বপ্নঘেরা নুহাশ পল্লী, চান্দনার নাগবাড়ী, আনসার একাডেমি, ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান আর বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক এ শহরকে করেছে পর্যটন বিকাশের এক অপার সুযোগ। Continue reading সেন্ট নিকোলাস টলেন্টিনোর গির্জা

বখত বিনতের মসজিদ

সাম্প্রতিক গবেষণায় হাজার বছরের নগরী ঢাকার ঐতিহ্য নিয়ে অনেক কিছু জানার সুযোগ হয়েছে। ঢাকা শহরে রয়েছে নানা যুগ পর্বের প্রত্ন স্থাপনা। একসময় ঢাকাকে বলা হতো ‘মসজিদের শহর’। বলা বাহুল্য, সাধারণ বিচারে এ শহরে মসজিদের আধিক্যের কারণেই অমন পরিচিতি যুক্ত হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে মসজিদ স্থাপত্য সমকালীন সময়ে মুসলিম সমাজের অস্তিত্বের কথাই প্রচার করে। সমাজ ইতিহাস নির্মাণে তাই মসজিদ বরাবর আকর সূত্র হিসেবে গৃহীত। আধুনিক ইতিহাসবিদরা অপ্রতুল তথ্যসূত্রের কারণে একসময় ধারণা করেছিলেন, মোগল আধিপত্য প্রতিষ্ঠার আগে অর্থাৎ সতেরো শতকের আগে ঢাকায় মুসলিম বসতি স্থাপন হয়নি। মোগলরাই ঢাকা শহরের পত্তন করেন এবং মুসলিম সমাজের বিকাশ ঘটান। প্রত্নসূত্র এখন এ ধারণার পরিবর্তন করছে। পনেরো শতকের মাঝ পর্বেই ঢাকায় নির্মিত মসজিদ শনাক্ত করা গেছে। আর সময়ের বিচারে এ পর্বের আদিতম মসজিদের মূল অংশটি বহু সংস্কারের পথ ধরে এখনো টিকে আছে। এটি ঢাকার নারিন্দায় অবস্থিত বখত বিনতের মসজিদ। যদিও অনেক লেখক-গবেষকের অসাবধানী শব্দ ব্যবহারে এটি সাধারণ্যে ‘বিনত বিবির মসজিদ’ নামে অধিক পরিচিত। Continue reading বখত বিনতের মসজিদ

দ্রোহ ও বিপ্লবের সাংবাদিক

show_image_sppgnewspro-phpঅনেক ক্ষোভ নিয়ে এক বর্ষীয়ানকে বলতে শুনেছিলাম, স্কুলের বাচ্চাদের মতো সাংবাদিকদেরও পোশাক থাকা দরকার। ভদ্রলোক মনে করেন, বাংলাদেশের অমর কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ সৃষ্ট চরিত্র হিমুর মতো এ পোশাকের রঙও হবে হলুদ। সেখানে আলখেল্লা, পাঞ্জাবি কিংবা টি-শার্ট কী হবে, তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই ওনার। কার সঙ্গে তর্ক হচ্ছে ভাবনা থেকে ঝেড়ে ফেলে তিনি পই পই করে বললেন, ‘মিডিয়া ইজন্ট আ প্লেস ফর দ্য রিফ্লেকশন অব রিয়েলিটি’। ব্যক্তি-গোষ্ঠী, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও দলীয় স্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে এ সময়ে গণমাধ্যমগুলোর যে দুর্দশা, সেখানে এমন হটকারী মন্তব্যের জবাব দেয়াটাও হয়ে যায় বেশ কঠিন। তবে গৌরবময় পেশা হিসেবে সাংবাদিকতার অতীত এখনো সমুজ্জ্বল, উন্নত ও গৌরবে চিরভাস্বর। অনেক আনন্দের সঙ্গে আমরা স্মরণ করতে পারি জাতীয় কবি, তারুণ্য, দ্রোহ, প্রেম ও বিপ্লবের কবি কাজী নজরুল ইসলামও একটা সময় ছিলেন সাংবাদিক। আর স্বভাবসিদ্ধ দ্রোহের তাড়নায় লিখেছিলেন একটি আগুনঝরা সম্পাদকীয়, পত্রিকা বন্ধের পাশাপাশি জামানত পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত হয় ‘নবযুগ’ শীর্ষক সংবাদপত্রটির। Continue reading দ্রোহ ও বিপ্লবের সাংবাদিক

বাংলা ভূখণ্ডে পর্তুগিজ

আটলান্টিক পাড়ের দেশ পর্তুগাল। বাংলায় দেশটির নাম উচ্চারণ করতে গিয়ে রথী-মহারথীও অনেক সময় গণেশ উল্টে ফেলেন; অবলীলায় বলে দেন পুত্তগাল, পুর্তগ্যাল, পুতুগাল আরো কত কী! নদীমাতৃক শান্ত-সুবোধ নিরীহ ভূমিতে সাগরের ত্রাস পর্তুগিজদের নিয়ে এত আলোচনার হেতু কী? ইতিহাস অন্বেষায় উঠে এসেছে এর বাস্তব চিত্র। ঘুরেফিরে আসে উত্তমাশা অন্তরীপে আশাহত সেই নাবিক বার্থোলোমিউ দিয়াজের নাম। তার ব্যর্থতাকে সফলতার সোপান বানিয়ে বসা ভাস্কো দা গামার নামও বলা যেতে পারে অকপটে। ১৪৯৭ সালের কথা, অনেক আগ্রহের দেশ ভারত তখনো ইউরোপীয়দের কাছে তেমন পরিচিতি পায়নি। তারা নানা পথে চেষ্টা করছে এর রহস্য উন্মোচনে, ঘুরেফিরে এর কাছে আসছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে নানা বাধার সম্মুখীন হয়ে থমকে যেতে হয়েছে তাদের। নাছোড়বান্দা ভাস্কো শুরুতে অনেক সফল সাগর অভিযান করলেও কখনো ভাবেননি সাধের ভারতবর্ষ এভাবে তাকে এসে ধরা দেবে। অনেকটা আমেরিকাগো ভেসপুচির মার্কিন মুল্লুক যাওয়ার আদলেই ভারতবর্ষে আগমন তার। এর পর বাকিটুকু ইতিহাস; যে ইতিহাসের পাতায় ইউরোপের নায়ক, ভারতবর্ষের দুঃখ-মূর্তিমান অভিশাপ ব্রিটিশরা। পুরো ইতিহাসের পাতা ঝেড়ে-মুছে শেষ প্রান্তে কোনো একটা কোনায় হয়তো অনেক নামের মধ্যে পাওয়া যায় একটি নাম— পর্তুগাল। তাদের জাতিগতভাবে বলা হয় পর্তুগিজ।

ক্যাভিলাউ যখন ভারতবর্ষে আসার বিশাল সাগরপথের বিবরণ নিয়ে লিসবন পৌঁছেছিলেন, তখন অনেকের বিশ্বাস হয়নি। বিশেষ করে বার্থোলোমিউ দিয়াজের ব্যর্থতা তখনো সব ইউরোপীয় নাবিকের মনে গেঁথে আছে, তারা ভুলতে চাইছে উপকূলে ঝটিকা ঝড়-ঝঞ্ঝার দুর্ভাবনাময় সময়গুলো। ভারতবর্ষে আসার পথ নির্দেশ করার কয়েক দশক পেরিয়ে গেছে, এদিকে ইউরোপীয়দের সুযোগ হয়নি এ পথে গিয়ে ভারতের মাটিতে পা রাখার। পর্তুগাল তো বটেই, ইংরেজ, ফরাসি ও স্প্যানিয়ার্ডরা ঘুরে বেড়িয়েছে ক্রিক থেকে ক্রিক, অন্তরীপ থেকে অন্তরীপ আর বন্দর থেকে বন্দরে; তবু দেখা মেলেনি ভারতবর্ষের। প্রিন্স অঁরি দ্য নেভিগেটরের নির্দেশক্রমে এগিয়ে যেতে যেতে একসময় কালিকট বন্দরে এসে জাহাজ নোঙর করেন। তবে বাংলার সঙ্গে পর্তুগিজদের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করতে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে আরো অনেকটা পথ।

বাংলায় পতুর্গিজদের অবস্থান ও স্থানীয় সংস্কৃতিতে তাদের প্রভাব বিশ্লেষণ করার জন্য অনেক সূত্র থেকে তথ্য মেলে। বাংলা ও বাঙালির ইতিহাস অনুসন্ধান প্রসঙ্গে অনেকেই পর্তুগিজদের বাংলায় আগমন প্রসঙ্গে বলেছেন। বিশেষ করে দীনেশ চন্দ্র সেনের ‘বৃহত্বঙ্গ’ শীর্ষক গ্রন্থে পর্তুগিজদের পরিচয় মেলে এভাবে— ‘মগদস্যুরা পর্তুগীজদিগের সঙ্গে যোগ দিয়া দেশে যে অরাজকতা সৃষ্টি করিয়াছিল তাহা অতি ভয়াবহ। তাহাদের স্পর্শদোষে অনেক ব্রাহ্মণ পরিবার এখনও পতিত হইয়া আছেন। বিক্রমপুরের মগ-ব্রাহ্মণদের সংখ্যা নিতান্ত অল্প নহে। মগ ও পর্তুগীজদের ঔরসজাত অনেক সন্তানে এখনও বঙ্গদেশ পরিপূর্ণ। ফিরিঙ্গিদের সংখ্যা চট্টগ্রাম, খুলনা ও ২৪ পরগনার উপকূলে, নোয়াখালীতে, হাতিয়া ও সন্দ্বীপে, বরিশালে, গুণসাখালি, চাপলি, নিশানবাড়ী, মউধোবি, খাপড়াভাঙ্গা, মগপাড়া প্রভৃতি স্থানে অগণিত। ঢাকায় ফিরিঙ্গিবাজারে, তাহা ছাড়া কক্সবাজারে ও সুন্দরবনের হরিণঘাটার মোহনায় অনেক দুঃস্থ ফিরিঙ্গি বাস করিতেছে।’

একজন প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষক হিসেবে বিভিন্ন তথ্যসূত্র ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি, দীনেশ চন্দ্র সেনের বিবরণ অনেকাংশে অপ্রতুল ও অনুমাননির্ভর। বিশেষ করে তিনি মউধোবি, খাপড়াভাঙ্গা, মগপাড়া অঞ্চলে যে পর্তুগিজ বসতির কথা বলেছেন, তা আসলে পর্তুগিজদের নয়, বরং তিনি মগ-হার্মাদদের সঙ্গে পর্তুগিজদের একীভূত করে ফেলেছেন। গবেষণার জন্য লভ্য অপ্রতুল তথ্যসূত্র থেকে শুরু করে বিশ্লেষণের সীমাবদ্ধতায় পানিতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা বর্গী, মগ, হার্মাদ কিংবা পর্তুগিজদের মিলিয়ে ফেলাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে বাংলাদেশের নানা অঞ্চল, বিশেষ করে দক্ষিণে পর্তুগিজদের অবস্থান চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে দীনেশ চন্দ্র সেনের এই বৃহত্বঙ্গ এক অমূল্য দলিল। বিশেষ করে বাংলার নানা অঞ্চলে ত্রাস সৃষ্টি করতে পর্তুগিজ-হার্মাদ-ফিরিঙ্গি-মগ এ চতুর্শক্তি যে ভয়াবহতার জন্ম দিয়েছিল, তা নিঃসন্দেহে স্মরণযোগ্য।

মোহাম্মদ আলী চৌধুরী বাংলাদেশের এ অঞ্চল থেকে ঔপনিবেশিক আমলে যেভাবে ক্রীতদাস পাচার করা হতো, তার একটি চালচিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। আঞ্চলিক মিথে জানা গেছে, আরাকান অঞ্চল দিয়ে ক্রীতদাস পাচারের জন্য বড় খোলের নৌকা ব্যবহার করা হতো। সেখানে নৌকার খোলে করেই ক্রীতদাস পাচার করত পর্তুগিজ জলদস্যুরা। নারী-পুরুষ-শিশু নির্বিচারে ধৃত মানুষগুলোর হাত ছিদ্র করে বেতের ছিলা ঢুকিয়ে বন্দি করত। অনেকের হাতে-পায়ে শিকল পরিয়ে নিত তারা। এর পর নিতান্ত পশুর মতো তাদের তুলে জড়ো করত নৌকার খোলে। অনেক সময় অর্ধাহার-অনাহারে অনেকের মৃত্যু ঘটত। কখনো কখনো নৌকাডুবির ঘটনা ঘটলে এ মানুষগুলোর বাঁচার আর কোনো পথ থাকত না। বলতে গেলে অনৈতিক-অমানবিক-পাশবিক এক মানব পাচারের ব্যবসা শুরু করেছিল পর্তুগিজরা।

ইতিহাস অনুসন্ধান প্রসঙ্গে মোহাম্মদ আলী চৌধুরীর ভাষ্য অনেকটা এমন— ‘বস্তুত সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বাংলার উপকূলীয় এলাকায় মগ-ফিরিঙ্গিদের অব্যাহত দৌরাত্ম্য সমাজ জীবনে এক অভিশাপরূপে আবির্ভূত হয়। বিশেষ করে হিন্দু সমাজে নারীদের অবস্থা করুণ পর্যায়ে উপনীত হয়। যে সকল স্ত্রীলোক কোনো না কোনোভাবে মগ-ফিরিঙ্গির সংস্পর্শে আসত, তারা সমাজে চরম লাঞ্ছনা ভোগ করত।’ কেউ যদি পর্তুগিজ দস্যুদের হাতে ধৃত হওয়ার পর কোনোক্রমে বেঁচে পালিয়ে আসতে পেরেছে, সমাজ থেকে নিস্তার মেলেনি তাদের। বর্ণ প্রথার বলি হয়ে কেউ কেউ বেছে নিয়েছে আত্মহননের পথ, কেউ কেউ সমাজচ্যুত হয়ে আলাদাভাবে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হয়েছে। সতীশচন্দ্র মিত্রের বর্ণনায় তাদের দুরবস্থার চিত্র অনেকটাই উন্মোচিত, ‘যেসব স্ত্রীলোক পালাইবার কালে কোন প্রকারে ধৃত বা স্পর্শিত মাত্র হইত, তাহারা কোন গতিকে উদ্ধার পাইলেও সমাজের শাসনে জাতিচ্যুত বা সমাজবর্জিত হইয়া থাকিত। তাহাদের স্বামী বা পিতা নিঃসন্দেহে তাহাদিগকে পবিত্র জানিয়া স্নেহের কোলে টানিয়া লইলেও, নির্দয় হিন্দু সমাজের রুক্ষ কটাক্ষ তাহাদের প্রতি কিছুমাত্র সহানুভূতি দেখাইত না।’ এদিক থেকে ধরলে পতুর্গিজ দস্যুরা এ দেশে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। তারা দাস ব্যবসার প্রসার ঘটাতে গিয়ে যে অনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেছিল, তার সামাজিক প্রভাবও ছিল গুরুতর। দীনেশচন্দ্র সেন তার বৃহত্বঙ্গের উদ্ধৃতিতে যথার্থই বলেছেন ‘পর্তুগীজগণ তাদের নির্বিচার ও অবাধ ব্যাভিচার দ্বারা বাঙ্গলাদেশে কতকগুলি ব্যাধির সৃষ্টি করিয়াছিল। ভাবপ্রকাশে ফিরিঙ্গি ব্যাধি নামক রোগের উল্লেখ আছে। এই দুঃসাধ্য পীড়ার ফলে গলিত কুষ্ঠাদি জন্মে।’

বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলে ধীরে পর্তুগিজ দস্যুপনা বেড়ে ওঠার বিবরণ মিলেছে শ্রী প্রভাত রঞ্জন সরকারের উদ্ধৃতিতেও। তিনি বলতে চেয়েছেন, ‘পর্তুগীজ হার্মাদ, মগ জলদস্যুরা শত্গঙ [চাটিগাঁও, চিটাগাং], বাকলা [বরিশাল, বাকরগঞ্জ], সন্দীপ, নোয়াখালীর নারী-শিশু-যুবক-বৃদ্ধ হিন্দু-মুসলিম লোকেদের ধরে বিক্রি করে। এই কেনা-বেচায় দেশীয় বণিকরাও অংশ নেয়। বর্ধমান, হুগলি, মেদিনীপুর-নবদ্বীপের সম্পন্ন পরিবারের লোকেরা অবিবাহিত পুরুষের জন্য চন্দননগরের বিবিরহাট থেকে অপহূত দাসীদের কিনে আনে।’ প্রভাতকুমার এক্ষেত্রে পর্তুগিজদের অপকর্মের রুট পর্যন্ত চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছেনে সূচারুরূপে। কালিকট বন্দরে ভাস্কো দা গামার জাহাজ ভেড়ার পর থেকে এ অঞ্চলে মানুষের শান্তি নষ্ট হয়েছিল বলে মনে করেন অনেক ইতিহাসবিদ। আর তাদের অতিদ্রুত দমন করতে না পারার ব্যর্থতা এ অঞ্চলের শাসকরা এড়াতে পারেন না। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে ত্রাসের রাজত্ব কায়েমকারী পর্তুগিজদের আদি পিতা বলা যায় ভাস্কো দা গামাকে। তার দর্শন ছিল— স্বাভাবিক সহজ উপায়ে বাণিজ্য করতে না পারলে অস্ত্রধারণ থেকে শুরু করে লুটতরাজ— সবই বৈধ। তার হিসাবে মানুষ কিংবা তাদের গড়ে তোলা অবকাঠামোর সবই বাণিজ্য উপকরণ। আর সেগুলোকে খেয়ালখুশি করায়ত্ত করতে ভারতের বিভিন্ন বন্দরে ঘুরতে থাকে ভাস্কো দা গামা, ক্যাব্রাল, আলবুকার্ক ও আলমেইদার জাহাজগুলো। তবে বাংলা অঞ্চলে আসতে তাদের বেশ সময় লেগে যায়।

আলবুকার্ক ও আলবারগারিয়ার জাহাজগুলো বিভিন্ন বন্দরে ঢুঁ মারতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ১৫১৮ সালে তাদের মতই একজন দম জোয়াও দ্য সিলভেরিয়ার জাহাজ এসে নোঙর করে চট্টগ্রাম বন্দরে। একজন নাম না জানা পর্তুগিজ এজেন্টের পাশাপাশি কোয়েলহো ও জোয়াও সিলভেরিয়া ছিলেন তখনকার দস্যু দলের নেতা। শেষ পর্যন্ত গুলাম আলীর জাহাজ দখল করে চট্টগ্রাম অভিমুখে পা রাখার সুযোগ হয়েছিল সিলভেরিয়ার। বাংলায় পর্তুগিজ আগমনের পর সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। বিশেষ করে তারা মান্নার উপকূল থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত নৌপথে সব ধরনের ব্যবসায়ীকে সরিয়ে দিয়ে নিজেদের দাপুটে অবস্থান নিশ্চিত করতে চাইছিল। এজন্য তাদের সঙ্গে সরাসরি সংঘাত হয় অনেক আরব জাহাজের। উপকূলে চকিত আক্রমণ চালিয়ে স্থানীয়দের অবকাঠামো ধ্বংস থেকে শুরু করে লুটতরাজ হয়ে পড়ে নিত্যদিনের ঘটনা। ১৫২৬ সালের দিকে খাজা শিহাব উদ দীনের বাণিজ্য জাহাজ আক্রমণ করে পুরোটা লুটে নেয়ার ঘটনা এর উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।

পর্তুগিজ আক্রমণকারীদের পাশাপাশি আগমন ঘটে ভদ্রবেশী ধর্মপ্রচারকদের। তারা পাদ্রী হিসেবে বাংলা ভূখণ্ডের নানা স্থানে গিয়ে অবস্থান নেয়। নির্ভেজাল ধর্মপ্রচারকের তকমা তাদের গায়ে সাঁটা থাকলেও পর্তুগিজ দস্যুদের কেউ বিপদে পড়লে তাদের বড় আশ্রয় হয়ে উঠেছিলেন তারা। বন্দরে পর্তুগিজদের আনাগোনার পাশাপাশি পুরো ভূখণ্ডে তাদের পাদ্রীরা ছড়িয়ে পড়ে ১৫৫৯ সাল নাগাদ। তখন পর্তুগাল সরকার বাংলায় কীভাবে  তাদের বাণিজ্য চলবে, তার একটা বিশেষ নীতিমালাও তৈরি করে। এর পর ১৬০২ সালের দিকে ডোমিঙ্গো কার্ভালহো সন্দ্বীপ অঞ্চলে আস্তানা গাড়েন। সেবাস্তিয়াও গঞ্জালেস তিবাউ এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা সামরিক শক্তি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ভারতের মাটিতে পা রাখে ১৬০৫ সালের দিকে। বাংলা থেকে শুরু করে নানা অঞ্চলে চোরাগোপ্তা হামলা চালানো ও লুটতরাজে তাদের জুড়ি ছিল না। শেষ পর্যন্ত তারা সন্দ্বীপ অঞ্চলে নিজেদের দখলে নিয়ে সেখান থেকে বাংলার নানা এলাকায় একের পর এক আক্রমণ চালাতে থাকে। পর্তুগিজদের সন্দ্বীপ দখলের মাধ্যমে পুরো বাংলা তাদের করায়ত্ত হয়ে যাবে এমন আশঙ্কাও জন্ম নিয়েছিল। ফলে স্থানীয় শাসকরা সতর্ক হয়ে তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তবে তাদের দক্ষ নাবিকদের ভূমিকায় বারভূঁইয়া কিংবা মোগলদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাকল তথা বাকেরগঞ্জ, চান্দিকান তথা যশোর, ঢাকা, নোয়াখালী তথা ভুলুয়া এবং কাতরাবো অঞ্চলে পর্তুগিজ অবস্থানের তথ্য মেলে।

বাংলার রান্না থেকে শুরু করে আরো অনেক ক্ষেত্রে পর্তুগিজ প্রভাব নিয়ে আলোচনা করতে করতে প্রচলিত ইতিহাস ভুলতে শুরু করেছে পর্তুগিজ দুর্বৃত্তায়নের ইতিবৃত্ত। তবে এও মানতে হবে, আমাদের সংস্কৃতিতে তাদের কিছু না কিছু অবদান রয়েছে। আর যেকোনো জাতির সংস্পর্শে এমন অবদান থাকাটা অবাক কিছু নয়। যেমন— আনারস, গোল আলু, টমেটো, মরিচ, ঢেঁড়স, কাজু বাদাম, কামরাঙা, এমনকি পেয়ারার কথা বলতে গেলে তাদের স্মরণ করতে হয়। কেউ কেউ মনে করেন সুস্বাদু ‘আলফান্সো’ আম এ দেশে এনেছিল তারাই। এদিকে চাবি, বালতি, পেরেক, তামাক, গির্জা, বিশপ, বোতল, স্পঞ্জ, আতা কিংবা বারান্দা শব্দগুলো সরাসরি এসেছে পর্তুগিজ থেকেই। এমনকি বাঙালির তামাক টানার যে বদভ্যাস, তাও আয়ত্ত করেছে নাকি পর্তুগিজদের থেকেই। অসমর্থিত ঐতিহাসিক সূত্র থেকে অনেক ইতিহাসবিদ দাবি করেছেন, ছানা তৈরির প্রক্রিয়াটিও তাদের।

অনেকে মনে করেন, ১৭৭৬ সালের দিকে নাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেড রচিত ‘A Grammar Of The Bengali Language’-এর আগেই পর্তুগিজ পাদ্রী ম্যানুয়েল দ্য আসুম্পসাঁও রচনা করছিলেন বাংলা ব্যাকরণ। লুটতরাজ তাদের প্রধান কাজ হলেও অনেক পর্তুগিজ ধর্মপ্রচারকের বিপরীত স্রোতে হাঁটতে চেয়েছিলেন। যাদের মধ্যে বলা যেতে পারে সেন্ট জেভিয়ারের নাম। তার নামে কলকাতার পার্ক স্টিটে নির্মিত সেন্ট জেভিয়ার কলেজ এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে তারা সম্পদ আহরণের সুবিধার্থে চট্টগ্রামকে ‘পোর্ট-গ্রান্ডি’ এবং সপ্তগ্রামকে ‘পোর্ট পিকানো’ নাম দিলেও ১৬৬০ সালের দিকে বান্ডেলে নির্মাণ করে পশ্চিম বাংলার প্রথম গির্জা। এসব মিলিয়েই পর্তুগিজ আগমন বাংলার ইতিহাসে এক বিস্মৃত অধ্যায়ের নামান্তর। তাই তো আমরা এখনো বইপত্তর-জামাকাপড় রাখি পর্তুগিজ নামকরণে সেই আলমারিতে, গোসলের জন্য বালতিতে পানি এনে রোজ গায়ে মাখি সাবান, কাঠ পচা প্রতিরোধে লাগাই আলকাতরা, জামায় লাগাই বোতাম, কাগজপত্র আটকাই আলপিন দিয়ে, ইস্ত্রি না করলে জামাকাপড় সমান হয় না, অনেক মেয়ে বাঁধে ফিরিঙ্গি খোঁপা।

দোলাই-বুড়িগঙ্গা তীরে হাজার বছরের ঢাকা

দুটি নদী, যার একটিকে ভুল করে ডাকা হয় খাল, অন্যটি প্রচলিত নাগরিক ভাষ্যে নদ। সেই দোলাই-বুড়িগঙ্গার তীরেই বিকাশ ঘটেছিল ঐতিহ্যের ঢাকা নগরীর। দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়তে হয় সবাইকে, কী নামে ডাকব তাকে, হাজার বছরের নগরী, প্রাচীন এক রাজধানী শহর, দূষণে বসবাসের অযোগ্য, যানজটে অতিষ্ঠ এক দুর্ভাবনার মহানগর নাকি অন্য কোনো উপমায়? যে নামেই পরিচয় করানো হোক না কেন; ইতিহাস-ঐতিহ্যে, বিস্তৃতিতে, নাগরিক জীবনের প্রসারিত মঞ্চ হিসেবে এর গুরুত্ব একবাক্যে বলার নয়। ইতিহাস, অবস্থান, বিস্তৃতি; যেদিক থেকেই বর্ণনা করা হোক না কেন, ঢাকা রয়েছে ঠিক তার মতো করেই; যার প্রতিটি পদে আছে অনিশ্চয়তার শিহরণ। বয়সকেন্দ্রিক অনিশ্চয়তার কথায় ধরা যাক না। কিছু ইতিহাস গবেষক প্রত্নতাত্ত্বিক সূত্রগুলোকে আমলে না এনে প্রচার শুরু করলেন, ঢাকার বয়স মাত্র ৪০০ বছর, যার শুরুটা কিনা মোগল যুগ থেকেই। এদিকে ইতিহাসবিদ-প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষক একেএম শাহনাওয়াজ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও লিপি-সাক্ষ্য হাজির করে দেখালেন, ঢাকার বয়স যদি ৪০০ বছর দাবি করা হয়, সেখান থেকে হারিয়ে যাচ্ছে আরো ৪০০ বছরের বেশি সময়। তার পর নানা তর্ক-বিতর্কে এগিয়ে যেতে থাকে ঢাকার বয়স সম্পর্কিত আলোচনা। একদিক থেকে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কার আর অকাট্য দলিলের উপস্থিতি, অন্যদিকে Continue reading দোলাই-বুড়িগঙ্গা তীরে হাজার বছরের ঢাকা

জেরুজালেম গ্রন্থের মুখবন্ধ

স্মৃতি ইতিহাস হয়, অপ্রাপ্তিগুলো অতৃপ্ত মনে ভাষার মায়াবী আখর টানে; দেয় কাব্যের জাল বুনে যাওয়ার নিরলস অভিপ্রায়। অনেক ঘটনার ঘনঘটায় কিছু ঘটনা থেকে যায় এ ঘাট থেকে বেশ দূরে। এগুলো হৃদয়ে ধরে আবেগশূন্যতায় ভোগে মানুষ; কল্পবিলাসী প্রতারক মন তবুও বার বার কাঁদায় তাকে। জেরুজালেম এমন এক নগরী যার স্মৃতি রোমন্থনে এ কান্না সবার অতীত নিয়ে, ঐতিহ্যের শেকড় আর জাতিগত পরিচয়ের সংকট সামনে রেখে। হিব্রু থেকে ইহুদি জাতি বিকাশে আপন ভূখণ্ডের দাবি, স্মৃতিময় আল আকসা আর রাসূল সা. এর মিরাজ গমন হৃদয়ের মণিকোঠায় ধরা মুসলিম জনগোষ্ঠী, মহান যীশুর উত্থান ও তিরোধানে ঋদ্ধ পীঠস্থানের আবেগ আপ্লুত খ্রিস্টান কেউ এর বাইরে নয়। ইতিহাস কিংবা ধর্মকথন সবই বলছে প্রত্যেকের শেকড় রোমাঞ্চক এ রহস্যনগরী জেরুজালেমের গহিনে প্রোথিত। তাই ইতিহাস, সাহিত্য, প্রত্নচর্চা কিংবা চলচিত্র নির্মাণের চেষ্টা কোনো ক্ষেত্রেই কর্ম আর মোক্ষ নিজ গতিতে বেগবান হতে পারেনি। এখানে নিজ জাতির শেকড় টেনে
জেরুজালেমের উপর অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিটাই মূখ্য হয়ে গেছে সবার কাছে। মন্টেফিউরি থেকে কাসলার, কোহেলহো থেকে আসিমভ, বেনিয়ামিন থেকে লিংকন, হযরত ওমর রা. থেকে ক্রুসেড বিজয়ী সালাহউদ্দিন আইয়ুব প্রত্যেকের কাছে এ নগরীর নিয়ন্ত্রণ হয়ে গেছে সব কথার শেষ কথা। ইতিহাস লেখক কিংবা প্রত্নর্চাকারীর মৌলিক গুণাবলী, ইতিহাসের প্রকৃতি কিংবা অতীত চর্চার নীতিকথা বেশ ভালো করেই জানেন সবাই। কিন্তু জেরুজালেম এমন এক নগরী যার ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে এ নিয়ম শিকেয় তুলে সবাই চান নিজের ধর্ম, স্ব স্ব চিন্তা আর শেকড় থেকে যুক্ত আদর্শকে টেনে সামনে নিয়ে আসতে। একজন ইতিহাস-প্রত্নতত্ত্বের গবেষক হিসেবে তাই আমার মনে হয়েছে বাজারে-অনলাইনে ‘জেরুজালেমের ইতিহাস’ বলতে যা লভ্য তার একটাও জেরুজালেমের অতীত তুলে ধরেনি বরং লেখক মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা কিছু অতৃপ্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে।

Continue reading জেরুজালেম গ্রন্থের মুখবন্ধ