টেস্ট ক্রিকেটে ব্রাহ্মণ্যবাদঃ একজন প্রত্নতাত্ত্বিকের অনুভব।


০১.
প্রত্নতত্ত্ব পড়তে গিয়ে একটা বিষয় বার বার মনে হয়েছে মানুষ কেনো যেনো পেছনের দিকে যাচ্ছে। এই দেখুন না পাথর যুগের মানুষ জামা-কাপড় পরতো না, এখনো সিনেমার পর্দা থেকে সমুদ্রের ধার এমুনকি ঢালাই করা পুকুরগুলোতে পর্যন্ত সব জামা কাপড় ছাইড়া কিছু মানুষ ঝাঁপ দিতে পারলে বাঁচে। সৃষ্টির আদিকালে মানুষ জবরদস্তি করে একজনের চিন্তার ভার আরেকজনের উপর ছাইড়া দিতো। এখনো দেখুন কেম্নে চাপাইয়া দিবার চায়। একটু অপছন্দ হৈলে তুই ভাদা-ভাকুর, তুই ছাগু, তুই রাজাকার, তুই পাকি, তুই ভাদা আরো কত্ত কী ট্যাগের জ্বালায় ব্যাগ ভর্তি হৈয়া যায়। আগে মানুষ রান্না জানতো না মাংস পুড়াইয়া খাইতো, লতাপাতার রস খাইয়া আগুনের পাশে ধেই ধেই কৈরা নাচাকুদা করতো। বাহরে বাহ একটা আধপোড়া ছাগল কিংবা গরু লগে কিছু অগ্নিজল। লে গপাপগ গিল তার্পর শুরু কৈরা দে বাংলে কে পিছে হ্যায় তালা, ঘুচু কাঁহা সে ম্যায় সালা। ওরে থাম আমার তো কান ঝালাপালা।

০২.
একটা সময় ছিলো মানুষের মাঝে খেলাধুলার তেমন চল হয়নি। তখন আদিম খেলাই ছিলো মানুষের বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম। এপর মানুষ সভ্য হলো। খেলাধুলা আবিষ্কার করলো। শুরু হলো অন্যরকম বিনোদন। এইতো এক যুগও হয়নি। আমরা যখন স্কুলে পড়েছি বিকেল হতেই একটা ব্যাট কিংবা ফুটবল দিয়ে ছুটির পর মাঠের দিকে দে ছুট। আমাদের আব্বা-আম্মা কোথায় গেলাম কি করছি এটা নিয়ে ভাবতো না। কখনো ব্যাট কেড়ে নেয়নি। এটাতো গেলো ছেলেদের কথা। স্কুল পড়ুয়া মেয়েরাও নিজেদের মধ্যে নানা ধরণের খেলাধুলা করতো। যারা বেশি সাহসী অনেকে ছেলেদের সাথে ক্রিকেটও খেলতো। এখনকার মাম্মি ড্যাডির সন্তানেরা জন্ম থেকে ঐ যে প্যারাম্বুলেটরে চড়েন খুব সম্ভবত তাদের শেষটাও হবে একটা হুইল চেয়ারেই।

০৩.                                                                                  তাইতো তাদের মাম্মি-ড্যাডি তাদের মাঠে পাঠাতে ভয় পান। তারা নিজের রুমে কম্পিউটার নিয়ে বসে। আর ক্লাস টু থেকে কম্পিউটার নিয়ে ঘাঁটা করলেও শুধু খোঁজ রাখে কোথায় 720hd কিংবা 1080hd ভিডিও ভালো পাওয়া যায়। কম্পিউটারের অন্য সৃষ্টিশীল কাজগুলো তো বাদই দেন, যদি প্রশ্ন করেন বাংলা টাইপ জানো। বলবে, নো ওয়ে। আমি.. বাংলা টাইপ কি করবো। নো নিড। তারা কানে হেডফোন লাগিয়ে বসে থাকে। ব্লু-আইজ হিপনোটইজ, আই সয়্যার ছোটি ড্রেস মে, বম্ব লাগদি মেনু কাতাল কারে তেরি বম্ব ফিগার জাতীয় ইতর শব্দ টংকার তুলে মানের মন ও মগজে। তাই যখন ফেসবুক খুলে বসে তখন মায়ের বান্ধবীকেও বলে বসে হাই হর্নি। বাপের বয়সী লোকদের বলে হ্যেই ড্যুড। তাদের সেই নার্সারিতে শুরু, শেষতক আর পারেনা গুরু।

০৪.                                                                                          ব্যাক দাই আদিম যুগ। সেই আদিম খেলা। মাম্মি-ড্যাডির পুলাপাইনের তাই মুখে সিগ্রেট,চুরুট নাইলে সিসার নল। হাতে অগ্নিজলের গ্লাস এ বগলদাবা গার্লফ্রেন্ড। সভ্যযুগে মানুষ গোপনে প্রেমপত্র লিখতো, সেটাতে ছিলো আনন্দ-অনুভব আর কতো আবেগ। এখন দিন বদলেছে, ভালবাসা ভেসে আসে বিলবোর্ডে। তারপর কোনো এক মেয়ে ছেলের চোখ বেঁধে নিয়ে আসে তারই ওড়না দিয়ে। রাত ১২:০১ মিনিটে তাকে সার্প্রাইজ দেবে বলে। বলে রাখা ভালো এই ভালবাসার বিলবোর্ডের মতো হাজার বছরের প্রাচীন গুহাতেও অনেক প্রেম নিবেদনের চিত্রকর্ম ছিলো। তখন যেহেতু বর্ণমালা আবিষ্কৃত হয়নি এগুলোকে ভাষা বলতে দোষ কোথায় ?

০৫.                                                                                            প্রাগিতিহাস থেকে ফেরা যাক ইতিহাসে, এবার ক্রিকেট। শুরুতে নিয়ম ছিলো স্বাভাবিক। মাত্র দুটি দেশ সেই ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়া। ইচ্ছে হলে মুগুর সদৃশ কাঠের তক্তা আর একটা কাঠ-ক্যাম্বিসের গোলক নিয়ে নেমে পড়তো মাঠে। এবার গোল্লা ছুঁড়ো আর পেটাও যতো খুশি। সে সময় গেলো, বদলেছে ক্রিকেট। সাদাকালো টেস্ট জামানায় যুক্ত হয়েছে আরো প্রতিনিধি, বেড়েছে কলেবর। রুচি পাল্টে পরিসর বদলে এসেছে নির্মল আনন্দের ওয়ানডে ম্যাচ কিংবা ধুন্ধুমার বিনোদনের T20। অবাক করার বিষয় ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার মনে ভর করেছে সেই আদিম কুমতলব। তারা একা একা খেলতে চায়। মৌলবাদী ফ্যাসিস্ট সাম্প্রাদায়িক রাষ্ট্র ভারতের সাথে গাঁটছড়া বেঁধে তারা হরণ করতে চায় বাকি রাষ্ট্রগুলোর টেস্ট ক্রিকেট খেলার অধিকার। তাদের শক্তি বেশি তাহলে তারা ওটাই করুক। সেই আদিম হিংস্রতার সাথে ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়া একটা ছাইয়ের কৌটা নিয়ে কুত্তার মতো কামড়া-কামড়ি করতে থাক। আর ভারত সেতো মৌলবাদী ব্রাহ্মণ রাষ্ট্র, এলিট রাষ্ট্র তাদের ক্রিকেট খেলে কাজ নেই। সে গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল হয়ে ক্রিকেট না খেলেই ১ নম্বর অবস্থান ধরে ঢোল বাজাতে থাক, হুলুধ্বনি দিক। এদিকে বাকি দেশগুলোকে নিয়ে চলতে থাকুন নতুন ক্রিকেটের স্বপ্নের জগৎ। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনাল খেলুক আমেরিকা-বাংলাদেশ, টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হোক চীন, জার্মানি-ফ্রান্সের মধ্যে অনুষ্ঠিত হোক টেস্টম্যাচ। আগে হোক তো মন্দ কী ??

অযৌক্তিক মনে হলেও মিলিয়ে নিন। বাস্তবতার খুব কাছাকাছি নয় কী ? 

                                                                                 

মন্তব্য করুন